• রবিবার, ০৫ মে ২০২৪, ১২:১২ পূর্বাহ্ন

সাংবাদিক সংগঠন মানে সংঘবদ্ধ নিয়ন্ত্রক? অপরাধীদের পৃষ্ঠপোষক??

Reporter Name / ১৪৬ Time View
Update : মঙ্গলবার, ২৫ জুলাই, ২০২৩

সাঈদুর রহমান রিমন, অপরাধীরা এখন সংগঠন চিনে গেছে, সাংবাদিকদের জন্য তা আরেক বিপদ হয়ে দাঁড়িয়েছে। উপজেলা থেকে জেলা ও কেন্দ্রীয় পর্যায়ে সাংবাদিকদের স্বার্থ রক্ষার বুলি আউড়িয়ে যেসব সংগঠন গড়ে উঠেছে, ক্লাব, সমিতি, এসোসিয়েশন, ইউনিটি বানিয়ে সাংবাদিকদের সুরক্ষার কথা বলা হয়েছে – তাদের অনেকেই এখন উল্টো সাংবাদিকতার টুটি চেপে ধরার কাজেই ব্যস্ত। সঙ্গবদ্ধ অপরাধীরা কৌশলে সাংবাদিক সংগঠন বা এসোসিয়েশনকে নানা উপহার দিয়ে লেখক সাংবাদিকের মুখ বন্ধে বাধ্য করছে। এটা অভিনব এক পদ্ধতি।

উপজেলা, জেলা ও কেন্দ্র পর্যায়ে সাংবাদিকদের নানা রকম সংগঠন গড়ে উঠেছে, এমনকি ঢাকায় বিট পর্যায়েও রয়েছে স্বতন্ত্র সংগঠন। দুদকে, সচিবালয়ে, রাজউক গণপূর্তে, স্বাস্থ্য খাত, আদালত, শেয়ারবাজার, শিক্ষা, নির্বাচন কমিশন, অর্থ বাণিজ্য, ব্যাংক বীমা, নগর, পাওয়ার সেক্টর থেকে শুরু করে সাংবাদিকতার কোন বিটে এসোসিয়েশন নেই তা খুঁজে পাওয়া মুশকিল। তারা সাংবাদিকতা বিকাশে, সাংবাদিকের স্বার্থে সারা বছর কি কাজ করছেন তা সকলের জানার সাধ্য নাই। তবে এসব সংগঠনের ব্যানারে প্রতিবছর ফ্যামেলি ডে, পিকনিক, আনন্দ ভ্রমণ, প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীসহ নানা অনুষ্ঠানাদির নামে বিস্তর অর্থ ব্যয় হয়ে থাকে, রমরমা উৎসব খানাপিনার খবর সবাই জানি। এসব অনুষ্ঠান ও পুরস্কার প্রদানের স্পন্সর হিসেবে এগিয়ে আসেন চিহ্নিত কিছু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান। এক্ষেত্রে বরাবরই অভিযুক্ত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলোই অগ্রণী ভূমিকায় থাকে। তারাই সকল সদস্যের জন্য চাল, ডাল, আটা থেকে শুরু করে জুতা পর্যন্ত ত্রাণ স্টাইলে ভিক্ষা দেয়। আবার কোনো কোনো সংস্থা শুধুমাত্র সংগঠনের বাছাই করা কয়েক নেতাকে ডেকে নিয়ে আলাদা খাতির করে, পকেট ভরে দেয়- অতি গোপনে তাদের বিদেশ সফরেও পাঠায়। অতি সম্প্রতি বিজিবি এ ধরনের বিশ্রী কাণ্ড ঘটিয়ে বেশ সমালোচনার মধ্যে পড়ে।

যাই হোক অপরাধীরা অভিনব কায়দায় সাংবাদিকদের সংগঠনকে হাত করে সাংগঠনিক ভাবেও নিপীড়ন করে থাকে। সংগঠন, এসোসিয়েশন, ক্লাবে এতো দান খয়রাত করা লোকটির বিরুদ্ধে কোনো সাংবাদিক কিছু লিখলে তিনি বৈরী সাংবাদিক হিসেবে চিহ্নিত হন, সংগঠনের স্বার্থ বিরোধী সাংবাদিক হয়ে যান। তখন সাংগঠনিক ভাবে তাকে মোকাবেলা করার জঘন্যতাও শুরু হয়ে যায়।মফস্বল পর্যায়ে এসব ঘটনা অহরহ দেখা যায়, তবে ইদানিং রাজধানীতেও তা ঘটে চলছে। এসব এসোসিয়েশন থেকে নানা ব্যক্তি / প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নিউজ প্রকাশের ব্যাপারে অঘোষিত নিষেধাজ্ঞা জারি করারও বিদঘুটে নজির রয়েছে। নিষেধাজ্ঞা ছাড়াও কোন সাংবাদিকের কাধে কয়টা মাথা যে, সংগঠনের শুভাকাঙ্ক্ষী অপরাধী, লুটেরার বিরুদ্ধে কলম ধরে? আমার মত বৈরী সাংবাদিক ছাড়া খুব কম সাংবাদিকই সে ঝুঁকি নেয়।

যে অপরাধী নাসিরের বিরুদ্ধে একের পর এক নিউজ হলো, দেশের শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে যিনি চিহ্নিত – তিনিও যখন কোনো সাংবাদিক সংগঠন অনুষ্ঠানের নামে ৫ লাখ, ১০ লাখ টাকা দান খয়রাত দেন তখনতো তাকে সাংবাদিক দরদী বলতেই হবে। তার বিরুদ্ধে কি কলম ধরার আর কোনো উপায় থাকে? দুর্নীতিবাজ তাজুল যদি একাধিক বিটের একাধিক এসোসিয়েশন কিনে নিয়ে তার নিউজ ছাপা বন্ধ করে কিছু কি বলার থাকে? সাংবাদিকতার স্বাধীনতা নিয়ে সরকারের পিন্ডি চটকানো যায়, তাই বলে কি তা নিয়ে নিজ সাংবাদিক সংগঠনের বিরুদ্ধে আন্দোলন করা যায়? সংগঠন করা হয়, একতাবদ্ধতায় বলীয়ান হতে, শৃংখলাপূর্ণ ব্যবস্থাপনা গড়তে – অথচ সেই সংগঠন যদি সংঘবদ্ধ নিপীড়নের প্রধান বাহন হয়ে দাঁড়ায় তাহলে??

Please Share This Post In Your Social Media


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category